মানুষের কবিতা: বিরহের মাঝেও প্রেম আছে

বিরহের মাঝেও প্রেম আছে

বিরহের মাঝেও প্রেম আছে

আমি বিরহের কবিতাই পছন্দ করি
গদবাদা প্রেমের কবিতা আমার পছন্দ নয়।
আমি ভালোবাসি, তুমি বাসো না
আমি কাছে আসছি, তুমি আসছো না ।
তা দিয়ে ভয়াবহ প্রেমের কবিতা লেখা হয় না
আর পানসে প্রেমের কবিতা আমার এক্কেবারে পছন্দ নয়।
তার চেয়ে একপেশে বিরহই ভাল
“আমি তারে ভালোবাসলাম, সে আমাকে বাসলোনা” ।
অন্তত এই রকম একটা গড়ান অনুভূতিও
একফোঁটা বিরহ বোধকে ভয়াবহ উশৃঙ্খল করে দিতে পারে!
এই রকম একটা সস্তা অনুভূতির খাতিরেও
একটা নিতান্ত ভদ্র ছেলে দাড়ি-গোঁফ রেখে
রাস্তায় রাস্তায় বছরের পর বছর ঘুরে বেড়াতে পারে !
টানা সাত রাত সাত দিন না ঘুমিয়ে অপলক তাকিয়ে থাকতে পারে !
রাতের পর রাত খাতাকলম নিয়ে বসে থাকতে পারে !
অথবা মুহূর্তের সিদ্ধান্তে একটা লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে নিতে পারে-
একটা মাত্র লাফ, হ্যাঁ/না হ্যাঁ/না একটা সিদ্ধান্তের ব্যাবধান মাত্র!
অথবা বিরহের চেয়েও সস্তার এক বোতল মদ কিনে এনে
ঢক ঢক করে এক নিঃশ্বাসে সব গিলে নিতে পারে!
লক্ষ লক্ষ দেশলাই, লক্ষ লক্ষ ছিগারেট,
বোতলে বোতলে মদ বারে বারে নারী!
যাক, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃত সব ছারখার হয়ে যাক !
যাক, চরিত্র নামের ঠুনকো বিষয়টিও নষ্ট হয়ে যাক !
যাক, ভালোবাসার নথিপত্রগুলোও পুরে পুরে ছারখার হয়ে যাক !
যাক, অতি সাধারণ ভদ্র ছেলেটিও একদম নষ্ট ভ্রষ্ট হয়ে যাক…
একটু একটু করে, ধীরে ধীরে অথবা একবারেই ধ্বংস হয়ে যাক !

” না! না! না! সে আমাকে ভালোবাসে নি” …শুধু এই একটা বোধই কি যথেষ্ট নয়!
বিনিময়ে এক নিঃশ্বাসে পুরো পৃথিবীটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া যায় ,
তসনছ করে দেওয়া যায়, টালমাটাল করে দেওয়া যায় ।
জগতের সব সুর ছন্দ তাল এক থাবায় ছিনিয়ে নেওয়া যায়,
মুঠু খুলে ফুঁ দিয়ে তা আবার উড়িয়েও দেওয়া যায়!
আবার ডায়েরিগুলি সোনালি শস্যের মতো কবিতায় কবিতায় ভরেও উঠতে পারে ।
রাতারাতি বেড়ে উঠতে পারে সব ভয়াবহ প্রেমের কবিতা, সর্বনাশা সব বিরহের কবিতা,
তীব্র পাওয়া না পাওয়ার কবিতা…
অর্থহীন সৃষ্টি ধ্বংসের কবিতা ।।

ধ্বংস? হ্যাঁ, ছেলেটি ধ্বংস হয়ে যেতে পারতো, অথচ সে এখন সৃষ্টির খেলায় মেতে উঠেছে
মৃত্যুর দ্বারগোঁড়ায় দাঁড়িয়ে হয়তো বা এই অর্থহীন জীবনটাকেও তার কাছে ভয়াবহ অর্থবহ মনে হয়েছে…
মনে হয়েছে এই তুমি আছ, এই আমি আছি,
একই পৃথিবীর বুকে নিঃশ্বাস নিচ্ছি.
ইচ্ছে করলেই তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখছি ..
তোমার বাড়ির সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকছি…
এক জনম বেঁচে থাকার জন্য এই কি যথেষ্ট নয় ?

ছেলেটি আত্মহত্যা করতে পারতো, শেষ পর্যন্ত করেনি !
শেষ পর্যন্ত অতটা সাহসী হয়ে উঠতে পারেনি সে,
শেষ পর্যন্ত অতটা নির্মম হয়ে উঠতে পারেনি সে ।
তাছাড়া যারা ভালোবাসে তারা তো আর রাতারাতি খুনি হয়ে উঠতে পারে না!

আগেই বলেছি, আমি বিরহের কবিতাই পছন্দ করি।
তাই যখন তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে
আমি তোমাকে আমার জান প্রাণ দিয়ে আগলে রাখবো--কথা দিলাম ।
সমস্ত পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে যখন কোথাও এক ফোঁটা ভালোবাসা পাবেনা,
যখন দেখবে আমি ছাড়া তোমার জন্য আর অন্য কেউ অপেক্ষা করে নাই!
তোমার জন্যে ফোঁটা  লাল গোলাপটি নিয়ে আমিই দাঁড়িয়ে আছি,
তখন তুমি আমার কাছে উদ্ভ্রান্তের মত ছুটে আসবে !
বলবে আমায় ফিরিয়ে নাও তুমি, আমায় গ্রহণ করো…
আমি নিশ্চিত ! সেদিন তোমায় ফিরিয়ে দেব না।
আমি বিরহের মানুষ বিরহেই থাকতে চাই না…
বিরহের মাঝেও যে প্রেম আছে, আদর সোহাগ আছে,
তা আমি পৃথিবীর কাছে প্রমান করে যাবো।
আমার জন্য ভালোবাসা নয়, আমার জন্য কোন ভালোবাসা নাই,
তা আমি মানতে পারিনা---
আমার জন্য শুধু বিরহ বেদনা !
মানতে পারিনা---
তাছাড়া আমি সারা জীবন তো শুধু বিরহের কবিতাই লিখতে চাইনি !
বিরহের মাঝেও তো প্রেম থাকতে পারে!
তাই বলে কি আমি বিরহেই ডুবে থাকবো?
না,
আমি বিরহের মাঝেই তোমার ভালোবাসাকে অক্ষয় করে রাখবো। 

ক । দ ।

No comments: