মানুষের কবিতা: মা

মা

                                   মা

মা
মাগো
তোমার কথা যখন ভাবি
চোখাশ্রুতে ভাসি
তোমাকে আবার ফিরে পেতে
চাই আমি
তোমার জন্যই আমি ভূমিষ্ঠ
সহ্য করেছিলে সব কষ্ট
আমাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে
সেই দশ মাস দশ দিনেতে
অজস্র কষ্ট ব্যাথা জ্বালা যন্ত্রনা
তুমি সয়ে নিয়েছিলে যেথা
আমাকে তোমার পেটে নিয়ে
ছাড়লেনা সংসারের হাল
দশ মাস দশ দিনের মাথায়
তুমি একদিকে ব্যথায় কাতর
অন্যদিকে প্রসব হলোনা
ডাক্তারেরা তোমার পেট ছিঁড়তে চায়
তুমি তাতেও ভ্রুক্ষেপ করোনি
উদার চিত্তে সঠান তুমি
শুধু আমাকে আলো দেখাবে বলে
এই ছোট্ট অদম্য ইচ্ছার বলে
আধা ঘন্টা পরে পেট চিরে
আমি দেখলাম পৃথিবীরে
আর তুমি হাসিমাখা মুখে
ভুলে গেলে কষ্ট প্রথম চুমুতে
ঝাপটে নিলে স্নেহভরা বুকে

মাগো
তুমি যে সেই অপরাজিতা নারী
তুমি কখনো হার মানো নি
ভূমিষ্ঠ হবার পরেও থেমে নেই
আমাকে নিয়ে রচনা করতে বুকভরা স্বপ্ন
আর নিজে না খেয়ে না ঘুমিয়ে
আমার চোখে ঘুম পাড়াতে
আমি যে অকারণেই চিৎকার করতাম
তুমি জান প্রাণ দিয়ে আকড়ে নিতে বুকে
কি যেন কি হয়ে গেল এই বাতিকে
আমার ঘুম হয় না বলে
সারারাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে
শীতে তোমার বুকের উষ্ণতায়
আমাকে উষ্ণ রাখতে
আর তুমি সারারাত জেগে থাকতে
আমি নিদ্রাসুখে শি করে
ভিজিয়ে দিতাম একখানা কাপড়
কখনো কাদাময় শরীরে জড়িয়ে ধরতাম
কখনো আমার সাথে খেলা করতে
খোকা ঘুমালো পাড়া জাগলো গান শোনাতে
হাঁটু হাঁটু পা পা বলে হাঁটা শেখাতে
আমি তোমার আঁচলখানি ধরে
কখনো মুখে চিবে নিতাম
দুধ খাবার বেলায়ও
দুধ না পেলে দুধবৃন্তে দাঁত ফুটে দিতাম
আমি কি জানতাম
তুমি না খেয়ে আছো কতবেলা
কিংবা পানতা ভাত খেয়ে আছো
দুধ পাবো কি করে পানতা ভাতে
তবুও তুমি আমার মুখে দুধ দিতে
তুমি সয়ে নিতে সব
আমি যে কত দুষ্ট ছিলাম
তা তুমি না ছাড়া বুঝবে কে
অকারণেই চিৎকার করতাম
তুমি ছুটে আসতে উনুন ছেড়ে
কখনো ভাতের গ্রাস ফেলে
ঐদিকে তরকারি কিংবা ভাত পুড়ে ছাঁই
আমার ঘুম হয়না কেন, কেন চিৎকার করি
তাই আমার মেজাজ ভালো রাখার জন্য
পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে
কখনো বা ডাক্তারের কাছেছুটে যেতে
ধার করে টাকা নিয়ে
কি অসুখ করেছে জানতে
কিন্তু হঠাৎ একদিন তুমি আর নেই
আমি মা মা বলে
কেঁদে কেঁদে চিৎকার করছি
কিন্তু তুমি নাই
তোমার হাতের পরশ পাইনা
সেই আদর করে আর স্নেহে বুকে টেনে
কেউ আর নেয়না
তোমার মনাকে একা ফেলে
চলে গেলে তুমি মা
বুকে কষ্ট লুকিয়ে হাসিমুখে
তুমি কাউকে বুঝতে দাওনা
কে যেন আমায় কানে কানে বললো
মা আর ফিরবেনা
দূর দেশে চলে গেছে

মাগো
আমি যে আর লিখতে পারছিনা
চোখাশ্রুতে ভাসছে
তোমার মনার বুক
বুকটা ধড়ফড় করছে
আর তোমাকে ফিরে পাবার আকুলতায়
আবেগে হারিয়ে যাই তোমার স্নেহের কাছে
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে জমদূতের ঘরটা ভেঙে
আমার কাছে নিয়ে আসি তোমায়
ইচ্ছে করে খতম করে দিই জম বেটাকে
যে তোমার বুক থেকে সরিয়ে দিলো
তোমার সেই ছোট্ট মনা
এখন যে কত বড় হয়েছে

মাগো
আমার কাছে সেদিন
আরেক নারীর আগমন
জানি মাতৃসম কেউ নাই
কিন্তু সে আমাকে তোমার মত করে
আদর করতো বুকে টেনে নিত
এলোমেলো চুল আছড়ে দিত
জামা পড়িয়ে দিত
ভাত মেখে খাইয়ে দিত
আমার ব্যাথায় সে ব্যথিত হতো
ঘুম পাড়িয়ে দিত
কিন্তু সে আজ দূরে
আকাশে মেঘ জমেছে বলে
কখন মেঘ ঝরে আলো দেখা যাবে
আমি জানিনা

ক । দ ।

No comments: